কবে শেষ হচ্ছে ভয়াল করোনা
প্রকাশিত হয়েছে : ২:১২:০৬,অপরাহ্ন ১৫ মে ২০২০ | সংবাদটি ২২৯ বার পঠিত
আফজাল রেজাউল হক, নিউইয়র্ক থেকেঃ
করোনা ভাইরাসে পর্যুদস্ত আমেরিকার হোয়াইট হাউজ পর্যন্ত। এর সংক্রমণে যেখানে ইতিমধ্যে দুজন কর্মকর্তা পজিটিভ বলে সনাক্ত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের গভর্ণররা লকডাউন তোলে নিয়ে ব্যবসা বানিজ্যে পুনরায় গতি সঞ্চারের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পরিস্হিতি যখন এমন, তখন একটা প্রশ্নই সবার মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে যে, কবে শেষ হচ্ছে এই ভয়াল মাহামারি করোনা আর কিভাবেই বা শেষ হবে? ঐতিহাসিকদের মতে, যে কোনো মহামারীর সাধারণত দুই ধরনের সমাপ্তি থাকে। এক, চিকিৎসার মাধ্যমে অর্থাৎ একটি কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের মাধ্যমে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা দুটোই কমিয়ে নিয়ে আসা।
আর দুই হল, সামাজিক সমাপ্তি। এ প্রক্রিয়ায় মহামারীর ব্যাপারে মানুষের মাঝে যে ভয় বিরাজ করে সেটি যদি উধাও হয়ে যায়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বেড়ে যায়,আর রোগটি বা মহামারী প্রাকৃতিকভাবেই তার কার্যকারীতা হারায়।
চিকিৎসার মাধ্যমে যেসব মহামারী চিরতরে দুর করা সম্ভব হয়েছে তার একটি হল জল বসন্ত। একটি কার্যকরী ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে আজীবন এই জলবসন্ত রোগটি থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। বিউবনিক প্লেগের আক্রমনে পৃথিবীর ইতিহাসে গত ২০০০ বছরে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই রোগটির নামও শুনা যায় না।
ঔষধ আবিষ্কার করে একটি মহামারীকে সম্পূর্নরুপে পরাস্ত করতে না পারলেও এর সমাপ্তি ঘটতে পারে কেবল রোগটির ব্যাপারে মানুষের মনে যে ভয় কাজ করে সেটি দুর হয়ে গেলে। কারণ মানুষ এই রোগটি নিয়ে ভয় করতে করতে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং এই মাহামারীর মধ্যেই জীবনজাপনে অব্যস্ত হয়ে পড়বে।
হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ জেরিমি গ্রীন বলেন, “মানুষ যখন জানতে চায় ‘এর সমাপ্তি কোথায়?’ আসলে তারা রোগটির সামাজিক সমাপ্তিই জানতে চায়।”
১৯১৮ সালের ফ্লুতে সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ থেকে ১০০ মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল। যুবক থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষই এই মহামারীর শিকার হয়েছিলো, এতিম হয়েছিলো হাজারো শিশু, লাখো পরিবার তাদের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়েছিল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন হাজারো সৈন্য মারা গিয়েছিল এই মহামারীর প্রাদুর্ভাবে।
সারা বিশ্বজুড়ে তান্ডব চালানোর পর এটি অতি সাধারণ একটি সিজনাল ফ্লু’তে রুপান্তরিত হয়। ভ্যাকসিন আবিষ্কার ছাড়াই এই মহামারীর সমাপ্তি হয়েছিল।এটাই একটি মহামারীর সামাজিক সমাপ্তি। রোগ বালাই আর যুদ্ধের দুঃস্বপ্নকে পেছনে ফেলে পৃথিবীর মানুষ একটি নতুন শুরুর জন্য প্রস্তুত ছিল। সেই ফ্লু বা ভাইরসটি এখনো সিজোনাল ফ্লু হিসেবে প্রকৃতিতে আবর্তিত হচ্ছে, কিন্তু ভাইরাসটির শুরুর দিকের সেই ধংসাত্বক চরিত্রটি এখন আর কেউ স্মরণ ও করতে পারে না।
ইতিহাসবিদদের মতে কোভিড-১৯ ভাইরাসটির ও কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পূর্বেই সামাজিকভাবে দুর হয়ে যেতে পারে। মানুষ তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া বিধিনিষেদের কারনে এতটাই বিরক্ত হচ্ছে যে ভাইরসটির তান্ডব চলতে থাকলেও মানুষ আর এটিকে পাত্তা না দিয়ে, নিজেরাই মহামারীর সমাপ্তি ঘোষনা দিয়ে সাভাবিক জীবন-যাপন শুরু করে দিতে পারে। এতে করে মানুষ ভাইরাসেটি প্রাকৃতিকভাবেই দুর্বল হয়ে কার্যকারিতা হারাতে পারে।