নবীগঞ্জে চেয়ারম্যান মুকুল হাইকোর্টে রীট করে জমকালো আয়োজন জনমনে সমালোচনা
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:২৮:৫৭,অপরাহ্ন ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ | সংবাদটি ৮৪ বার পঠিত
নবীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
গরীবের চাল আত্মসাতের জন্য বরখাস্তকৃত হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুলের সাময়িক বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করেছেন মহামান্য হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। গত ২৩ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি এম. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি এম. মাহমুদ হাসান তালুকদারের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
ইমদাদুর রহমান মুকুলের পক্ষে রিট মামলাটি পরিচালনা করেন সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু। এরপর গত ১০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্বপদে বহাল হন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদে এক সুধী সমাবেশ বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি ওই অনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ারম্যান হিসেবে ফের দায়ীত্বভার গ্রহণ করেন। চাল আত্মসাতের পর বরখাস্ত হয়ে হাইকোর্টে রীট করে স্বপদে বহাল হয়ে এতো জমকালো আনুষ্ঠানিকতা ও মিষ্টি বিতরণসহ নানা কর্মকান্ডে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে ওই ইউনিয়ন তথা নবীগঞ্জ উপজেলাজুড়ে। অনেকেই এমন কর্মকা-কে নির্লজ্জের পরিচয় বলে আখ্যায়িত করেছেন। কেউ কেউ বলছেন-এমন দুর্নীতি করেও এমন আয়োজন নির্লজ্জের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন।
উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন দেবপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল মুহিত চৌধুরী, সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদ আলম মাহবুব,বীর মুক্তিযোদ্ধা আজমান আলী,সাবেক ইউপি সদস্য আশরাফ আলীসহ আরো অনেকেই ।
চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল তার বক্তব্য বলেন, আমি ছাত্র জীবন থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছি। ছাত্রলীগ নেতা থেকে আমি নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হয়েছিলাম।
গজনাইপুর ইউনিয়নের একাধিক বার আপনাদের ভালবাসায় ও সহযোগীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। চাল আতœসাতের যে অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে উঠেছিল এই অভিযোগের কারনে আমি ২ মাস ১৫ দিন চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার ছিলাম।
একটি মহল আমার মানসম্মান হানি করার জন্য আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো উল্লেখ্য-নবীগঞ্জের গজনাইনপুর ইউনিয়নে বিগত চার বছর ধরে ২২৯ জন লোকের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর (১০টাকা) কেজির চাল আত্মসাতের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। পরে নবীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য বান্ধব কমিটির মাসিক সভার সিদ্ধান্তক্রমে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে অবশেষ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। চাল চুরির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গত ৭ জুলাই ইমদাদুর রহমান মুকুলকে সাময়ীক বরখাস্ত সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির হতদরিদ্রদের তালিকা প্রণয়নে ব্যাপক অনিয়ম, নিয়ম বহির্ভুতভাবে ডিলারকে দিয়ে তালিকা প্রস্তুত করা, মৃত ব্যক্তিকে ও একই ব্যক্তির নাম একাধিকবার অন্তর্ভুক্ত এবং বরাদ্দকৃত চাল সঠিক ব্যক্তির মাঝে বিতরণ না করার অভিযোগে গজনাইনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
চাল চুরি প্রমাণিত হওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর দলীয় পদ থেকেও অব্যাহতি পান নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল। গত ১৪ জুলাই নবীগঞ্জ উপজেলা অডিটেরিয়ামে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতিভাবে তাকে সাময়িক অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ। এরপর থেকেই নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়ীত্ব পালন করছেন গিয়াস উদ্দিন আহমদ।
এদিকে, শুধু ২২৯ জন লোকের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর (১০টাকা) কেজির চাল আত্মসাতের অভিযোগই নয়, ইমদাদুর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এরমধ্যে দুই মহিলার ভিজিডির চাল আত্মসাতের অভিযোগও তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।