কাল কমলগঞ্জে মণিপুরী রাস উৎসবঃ পাড়ায় পাড়ায় চলছে চুরান্ত প্রস্তুতি
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৩৫:৪৬,অপরাহ্ন ২৯ নভেম্বর ২০২০ | সংবাদটি ১২৩ বার পঠিত
কমলগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
হাতে আছে আর মাত্র একদিন। ঘন্টার হিসেবে আর কয়েক ঘন্টা পরেই রাখাল নৃত্যের মূর্চনায় শুরু হবে কমলগঞ্জের ১৭৮তম রাস উৎসব। করোনাকালীন সময়ে স্তব্ধ হয়ে আছে গোটা বিশ্ব। তাই এমন সময়েও যেন রাসের সৌন্দর্য মানুষকে মোহিত করে সেই চেষ্টায় মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি।
মণ্ডপগুলোর দিকে তাকালে চোখে পড়ে, প্রশিক্ষক শশব্যস্ত হয়ে দেখিয়ে যাচ্ছেন নাচের ভঙ্গিমা। কোথাও চলছে রাস নৃত্যের মহড়া। কোথাও চলছে রাখালনৃতের অনুশীলন। প্রতিবছর এমন সময় এ ব্যস্থতাই চোখে পড়ে কমলগঞ্জের মনিপুরী পাড়ায়। পরিবেশনাগুলোকে আরো নিখুঁত করতে চলছে শেষ সময়ের চেষ্টা।
সিলেট বিভাগে অনেকগুলো ক্ষুদ্র নৃ-তাত্বিক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। এর মধ্যে সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যে অন্যতম হচ্ছে মনিপুরি সম্প্রদায়। মনিপুরি সম্প্রদায়ের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব মহারাস লীলা। আগামী ৩০ নভেম্বর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি জায়গায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই বর্ণিল উৎসবটি। মনিপুরী অধ্যুষিত গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় এখন রাস উৎসবের রং ফুটছে। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ।
প্রতিবছর এমন সময় এ ব্যস্ততাই চোখে পড়ে কমলগঞ্জের মনিপুরী পাড়ায়। তবে বৈশ্বয়িক মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারণে ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব এবার সীমিত পরিসরে করা হবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে এই আয়োজন সফল করতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মনিপুরি পাড়ায় চলছে চূড়ান্ত মহড়া ও আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি।
এ বছর কমলগঞ্জের মাধবপুর জোড় মণ্ডপে পূর্ণ হবে ১৭৮তম রাস উৎসব। মাধবপুরের রাসমেলার আয়োজক হচ্ছে মনিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘ। মনিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়।
৩০ নভেম্বর সোমবার দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড়া মণ্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। রাতভর রাধাকৃষ্ণের প্রণয়োপাখ্যানের সে রাসলীলা উপভোগ করতে সারাদেশ থেকে ছুটে আসেন হাজারো নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি-সাংবাদিক, দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষজন। তুমুল হৈচৈ, আনন্দ উৎসাহ ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খ ধ্বনীর মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মের অবতার পুরুষ শ্রী কৃষ্ণ ও তার সখি রাধার লীলাকে ঘিরে এই একটি দিন বছরের আর সব দিন থেকে ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসে কমলগঞ্জবাসীর জন জীবনে।
অন্যদিকে ১৯৮৬ সাল থেকে কমলগঞ্জের আদমপুরে মনিপুরি মৈতৈ সম্প্রদায় আয়োজন করছে পৃথক রাসমেলার। আদমপুরে পাশাপাশি দুটি স্থানে হবে রাস উৎসব। আদমপুর জোড়া মণ্ডপ ও মনিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে। এখানেও থাকবে যথারীতি রাখাল নৃত্য ও রাসলীলা। তবে মনিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া ও মনিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায় আলাদা স্থানে আয়োজন করলেও উৎসবের রসের কথা, আনন্দ-প্রার্থনা সবই একই। উৎসবের ভেতরের কথা হচ্ছে বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, রাস উৎসবকে সফল করতে প্রায় মাস খানেক ধরে ছয়টি বাড়িতে রাসনৃত্য এবং রাখালনৃত্যের প্রশিক্ষণ ও মহড়া চলছে। তিনটিতে রাসনৃত্য ও তিনটিতে রাখাল নৃত্য।
মাধবপুর ও আদমপুরে রাসমেলার আয়োজকরা জানিয়েছেন, মহারাসলীলাল মূল উপস্থাপনা শুরু হবে দুপুর থেকে ‘গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য’ দিয়ে। গোষ্ঠলীলায় রাখাল সাজে কৃষ্ণের বালক বেলাকে উপস্থাপন করা হবে। এতে থাকবে কৃষ্ণের সখ্য ও বাৎসল্য রসের বিবরণ। গোধূলি পর্যন্ত চলবে রাখালনৃত্য। রাত ১১টা থেকে পরিবেশিত হবে মধুর রসের নৃত্য বা শ্রীশ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলানুসরণ। এই রাসনৃত্য ভোর (ব্রাহ্ম মুহূর্ত) পর্যন্ত চলবে। এই রাসনৃত্যে গোপিনীদের সাথে কৃষ্ণের মধুরলীলাই কথা, গানে ও সুরে ফুটিয়ে তুলবেন শিল্পীরা।
মনিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ‘আমাদের প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ। এখন পুরো এলাকায় উৎসবের আমেজ। নতুন কাপড়চোপড় কেনা হয়েছে। আমাদের কাছে হেমন্তকাল মানেই রাস-পূর্ণিমা, রাস উৎসব।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক ও কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফুর রহমান বলেন, আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তার জন্য দুই জায়গাতেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে নিরাপত্তায় পুলিশের তিন স্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে এবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে মনিপুরি রাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলার অনুমতি দেয়া হয়নি। লোকসমাগম সীমিত করা হবে।